সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ০৮:২৯ পূর্বাহ্ন

‘দুর্নীতির অভিযোগ’ থেকে মুক্তি পাচ্ছেন এসপি সুভাষ

‘দুর্নীতির অভিযোগ’ থেকে মুক্তি পাচ্ছেন এসপি সুভাষ

দুর্নীতি ও অর্থ পাচারের অভিযোগ থেকে রেহাই পেতে যাচ্ছেন পুলিশ সুপার সুভাষ চন্দ্র সাহা এবং তার স্ত্রী রিনা চৌধুরী। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) এক কর্মকর্তার ভাষ্য, এ দম্পতির ওপর থেকে সব অভিযোগই প্রত্যাহার করে নেওয়া হবে।

দুর্নীতি ও অর্থ পাচারের অভিযোগে পাঁচ বছর আগে সুভাষ চন্দ্র সাহা ও রিনা চৌধুরীর বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক। এর পর তাদের বিরুদ্ধে আলাদা করে অনুসন্ধানে নামে সংস্থাটি। অনুসন্ধানে আরও অবৈধ সম্পদের হদিস পাওয়ায় এ দম্পতির বিরুদ্ধে আরও দুটি মামলার সুপারিশ করেন তদন্ত কর্মকতারা। পাশাপাশি আগে দায়ের হওয়া মামলার অভিযোগপত্র দাখিলের জন্য তদন্ত কর্মকর্তা সুপারিশও করেছিলেন।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ক্ষমতার অপব্যবহার করে বিপুল সম্পদ বানিয়েছেন সুভাষ চন্দ্র সাহা। দুর্নীতির দায় থেকে রক্ষা পেতে সিংহভাগ সম্পদ রেখেছেন স্ত্রীর নামে।

সুভাষ চন্দ্র বর্তমানে পুলিশ সদর দপ্তরে সংযুক্ত। তার বিরুদ্ধে দায়ের হওয়ার মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বদল হয় তিনবার। প্রথম দুই তদন্ত কর্মকর্তা মামলার অভিযোগপত্র দাখিলের সুপারিশ করেছিলেন। তারা অনুসন্ধান প্রতিবেদনে জানান, এ দম্পতির সাড়ে ১৬ কোটি টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ রয়েছে। এ কারণে তাদের নামে আরও দুটি মামলা দায়েরের সুপারিশ করেছিলেন তদন্ত কর্মকর্তারা। তবে সুপারিশ প্রত্যাখ্যান করে দুদক।

২০১৭ সালের ২৪ অক্টোবর দুদকের তৎকালীন সহকারী পরিচালক আব্দুল ওয়াদুদ বাদী হয়ে ঢাকার বংশাল থানায় এ মামলা করেন। মামলায় বলা হয়, সুভাষ ও তার স্ত্রীর যৌথ নামে ওয়ান ব্যাংকের তিনটি শাখায় ১৯টি এফডিআরের মাধ্যমে ৮ কোটি ৩৬ লাখ ১৩ হাজার ৩৬৭ টাকার সন্ধান পাওয়া গেছে। মামলার তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় বাদী আব্দুল ওয়াদুদকেই। এর পর সুভাষ দম্পতির বিরুদ্ধে আলাদা করে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অনুসন্ধানের দায়িত্বও দেওয়া হয় তাকে।

ব্যাংকে এফডিআর করে রাখা অর্থ ও পাচারের মামলার তদন্ত শেষ করে অভিযোগপত্র দাখিলের সুপারিশ করেছিলেন তদন্ত কর্মকর্তা আব্দুল ওয়াদুদ। একই সঙ্গে পুলিশ কর্মকর্তা সুভাষ ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে আরও দুটি মামলা দায়েরের সুপারিশ করেছিলেন দুদক কর্মকর্তা ওয়াদুদ। কিন্তু এসব প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান হয়।

পরে কমিশনের উপপরিচালক আলী আকবর তদন্তের দায়িত্ব পান। তিনি দুর্নীতির মাধ্যমে উপার্জিত অর্থ ব্যাংকে এফডিআর করে রাখা এবং অর্থ পাচারের প্রমাণ পেয়ে মামলায় অভিযোগপত্র দাখিলের সুপারিশ করেন।

এ ছাড়া গত আগস্টে তাদের বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত আরও দুটি মামলা দায়েরের সুপারিশ করে প্রতিবেদন দাখিল করেছিলেন অনুসন্ধান কর্মকর্তা আলী আকবর। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, সুভাষ সাহা ও তার স্ত্রীর নামে ১৬ কোটি ৫৯ লাখ ৬১ হাজার ৬৪ টাকার সম্পদ রয়েছে। এর মধ্যে রীনা চৌধুরীর নামে আছে ১৩ কোটি ৬১ লাখ ৩২ হাজার ৭৬৪ টাকার অবৈধ সম্পদ। এ ছাড়া তিনি সম্পদ বিবরণীতে গোপন করেছেন ৮৮ লাখ ৭০ হাজার ৪৭৪ টাকার সম্পদ। সুভাষ চন্দ্র সাহার নামে মোট ২ কোটি ৯৮ লাখ ২৮ হাজার ৩১২ টাকার সম্পদ পাওয়া কথা উল্লেখ করা হয় প্রতিবেদনে। এ প্রতিবেদনও প্রত্যাখ্যান করে দুদক। এর পর গত বছরের অক্টোবরে মামলার তদন্ত ও জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অনুসন্ধানে নতুন করে তৃতীয়বারের মতো দায়িত্ব দেওয়া হয় দুদকের উপপরিচালক সেলিনা আক্তারকে।

এ বিষয়ে সেলিনা আক্তার আমাদের সময়কে বলেন, ‘যেহেতু দুজনের পর আমাকে দায়িত¦ দেওয়া হয়েছে, তাই আমাকে অনেক বেশি সতর্ক হয়ে কাজ করতে হচ্ছে।’

দুদকের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে আমাদের সময়কে বলেন, ‘এসপি সুভাষ চন্দ্র সাহা এবং তার স্ত্রীকে সবগুলো অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেওয়াই এখন মুখ্য উদ্দেশ্যে এবং সেটিই হতে যাচ্ছে। এ জন্য সব আয়োজন সম্পন্নও করা হয়েছে।’

মামলা দায়েরের আগের দিন ফরিদপুর থেকে প্রত্যাহার করে পুলিশ সদর দপ্তরে যুক্ত করা হয় সুভাষ চন্দ্র সাহাকে। এরপর থেকে তিনি সেখানেই আছেন।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877